জনসংখ্যার নিরিখে নয়, বিপর্যস্ততার অনুপাতে ত্রাণ বরাদ্দ দেওয়ার তাগিদ

চলমান কোভিড-১৯ অতিমারি এবং সাম্প্রতিক বিধ্বংসী বন্যায় সিরাজগঞ্জের মতো তুলনামূলকভাবে বেশী দুর্যোগপ্রবণ চর এলাকায় উদ্ভুত পরিস্থিতির কারণে যে ধরনের ত্রাণ ও কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে, তা যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় পর্যায়ে সরকারি পরিষেবার কার্যকারিতা বাড়ানো দরকার। আর সেজন্য বিশদ ডাটাবেজ তৈরি সহ ত্রাণ বিতরণ সম্পর্কিত অবাধ তথ্য প্রবাহ ও তথ্যের প্রচারের মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি অত্যন্ত জরুরি। একই সাথে ত্রাণসহ অন্যান্য সরকারি সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে জনসংখ্যার পরিবর্তে সামগ্রিক বিপন্নতা মূল মাপকাঠি হিসেবে বিবেচ্য হতে পারে। ২৮শে ডিসেম্বর ২০২০ তারিখ সোমবার আয়োজিত “করোনা ও বন্যা মোকাবেলায় ত্রাণ কর্মসূচি এবং কৃষি প্রণোদনা: সরকারি পরিষেবার কার্যকারিতা” শীর্ষক একটি ভার্চুয়াল সংলাপে এই বক্তব্য উঠে আসে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) ও অক্সফাম ইন বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের আর্থিক সহায়তায় “গণতান্ত্রিক সুশাসনে জনসম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ” শীর্ষক চলমান প্রকল্পের আওতায় এ সংলাপটি আয়োজিত হয়। এ সংলাপটির সহযোগী আয়োজক ছিল মানব মুক্তি সংস্থা, সিরাজগঞ্জ এবং এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ।

চলমান কোভিড-১৯ অতিমারির অভিঘাত বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রায় সুদূরপ্রসারী চিহ্ন রেখে যাবে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এই দুর্যোগ পূর্ব-বিদ্যমান দুর্বলতাগুলোকে আরও সংকটময় এবং এসডিজির বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কোভিড অতিমারির প্রেক্ষাপটে সাম্প্রতিক বিধ্বংসী বন্যা সিরাজগঞ্জের মতো তুলনামূলকভাবে বেশী দারিদ্র্যপ্রবণ জেলাগুলির পরিস্থিতি আরও ঝুঁকিপূর্ণ  করে তুলছে।সিপিডি’র সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট জনাব মুনতাসির কামাল তার উপস্থাপিত মূল প্রতিবেদনে এই আঙ্গিকগুলো তুলে ধরেন। তিনি সিরাজগঞ্জ জেলায় করোনা ও বন্যা মোকাবেলায় গৃহীত সরকারি ত্রাণ এবং কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচির কার্যকারিতার একটি প্রাথমিক মূল্যায়নও উপস্থাপন করেন।

করোনা ও বন্যা মোকাবেলায় ত্রাণ এবং কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সামগ্রিকভাবে বিভিন্ন সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ পরিলক্ষিত হয়েছে। এই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, প্রণোদনার সহায়তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। ত্রাণ সেবা সম্পর্কিত ‘হটলাইন’ নাম্বারসহ (যেমন: ৩৩৩) প্রযুক্তিভিত্তিক বিভিন্ন অভিনব যেসব উদ্যোগ গৃহীত হয়েছে সে সম্পর্কে স্থানীয় পর্যায়ের সুবিধাভোগীরা এখনও যথেষ্ট সচেতন নন। সুবিধাভোগী নির্বাচন অনেক ক্ষেত্রেই অংশগ্রহণমূলক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়নি। সামগ্রিক চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে এবং উপজেলা/ইউনিয়ন ভিত্তিক বরাদ্দের বিভাজনের মধ্যে অধিকতর সমন্বয়ের জায়গা আছে। সুবিধাভোগী নির্বাচনের ক্ষেত্রে একটি বিশদ ডাটাবেসের অভাব সরকারি পর্যায় থেকে বারংবার উল্লিখিত হয়েছে।

এ মূল্যায়নের উপর ভিত্তি করে সুপারিশ রাখা হয় যে, সঠিক চাহিদা নিরূপন এবং সে অনুযায়ী বরাদ্দ নির্ধারণের জন্য স্থানীয় পর্যায়ের দারিদ্র্যের হার, জনঘনত্বের হার, বেকারত্বের হার ইত্যাদি বিবেচনায় নিতে হবে। এক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ে আর্থসামাজিক সূচকসমৃদ্ধ একটি বিশদ ডাটাবেজ তৈরি করা অত্যন্ত জরুরী। ত্রাণ সেবা সংক্রান্ত প্রযুক্তিনির্ভর উদ্যোগ (যেমন: হটলাইন/নির্ধারিত মোবাইল নাম্বার) সম্পর্কে জনসাধারণের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। সুবিধাভোগী নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা বৃদ্ধির জন্য বাস্তবায়ন নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রচার-প্রচারণা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও যেন সরকারি কৃষি প্রণোদনাসমূহ দুর্যোগে অধিকতর ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে পৌঁছায় তা নিশ্চিত করার ব্যাপারে সুপারিশ রাখা হয়।

মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব মোঃ হাবিবে মিল্লাত বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। তিনি ত্রাণ ও প্রণোদনা সরবরাহে অপ্রতুলতার ব্যাপারে দ্বিমত প্রকাশ না করে বলেন,  অনিয়মের যেসমস্ত অভিযোগ এসেছিলো সে ব্যাপারে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তিনি ত্রাণ সরবরাহে সংসদ সদস্যদেরকে আরও প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত করার বিষয়ে মত দেন, এবং ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জগুলিকে আরও ভালোভাবে মোকাবেলার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

সংলাপের আরেক বিশেষ অতিথি মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব তানভীর শাকিল জয় বলেন, করোনা মোকাবেলায় ও ত্রাণ বিতরণে স্থানীয় প্রশাসন অত্যন্ত স্বচ্ছভাবে কাজ করেছে, যদিও কিছু অপ্রতুলতা রয়েছে। তিনি বলেন, “উত্তরাঞ্চল যেহেতু একটি দুর্যোগপূর্ণ এলাকা, প্রণোদনা বরাদ্দের ক্ষেত্রে বিশেষ মনোযোগের প্রয়োজন।” কৃষিকার্ড হালনাগাদ করা এবং তা ডিজিটাল করার উপরে তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন। এছাড়াও তুলনামূলক বেশি দুর্গম চর এলাকার কৃষকদেরকে যাতে যথাসময়ে কৃষি প্রণোদনার সার ও বীজ সরবরাহ করা যায় সেদিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মত দেন।

চৌহালী ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা থেকে প্রায় ১২০ জন কমিউনিটি-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের (সিবিও) সদস্য ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণ এই সংলাপে যোগ দেন এবং বিভিন্ন পরামর্শ ও মন্তব্য উপস্থাপন করেন। তাদের বক্তব্যে ত্রাণ সহায়তার অপ্রতুলতা এবং সময়মাফিক ত্রাণ বিতরণ করার বিষয়গুলো উঠে আসে। তারা তাদের তৃণমূল অভিজ্ঞতার আলোকে বলেন, তালিকাভুক্ত হওয়া সত্ত্বেও অনেকেই ২৫০০ টাকা নগদ সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এছাড়াও সিরাজগঞ্জ এলাকায় দুর্বল টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার দরুণ সেখানকার স্থানীয় জনগণ বিভিন্ন সরকারী হটলাইন পরিষেবার যথাযথ সুফল লাভ করতে পারেনি।

জনাব শোয়েব ইফতেখার, প্রধান, ইকোনমিক ইনক্লুশন অ্যান্ড জাস্টিস, অক্সফাম ইন বাংলাদেশ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে এই প্রকল্প ও সংলাপের উদ্দেশ্য তুলে ধরেন। সংলাপের শেষে বক্তব্য রাখেন মানব মুক্তি সংস্থা-এর নির্বাহী পরিচালক জনাব মোঃ হাবিবুল্লাহ বাহার। তিনি সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, গবেষণা প্রতিবেদনটি খুবই সময়োপযোগী ও কার্যকর হয়েছে। তিনি বলেন, দরিদ্রতার ভিত্তিতে ও ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সংখ্যার অনুপাতে যদি সহায়তা বরাদ্দ দেওয়া হয়, তাহলে তা খুবই যৌক্তিক হবে। এছাড়া তিনি প্রস্তাব করেন, কৃষিঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন জামিনদার হিসেবে কাজ করতে পারে। দরিদ্র পরিবারের তালিকা ও ডাটাবেজ তৈরিতে বিভিন্ন মানবিক সাহায্য প্রতিষ্ঠানকে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে।

সিপিডি’র সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান সংলাপে সভাপতিত্ব করেন। তিনি সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে অনুষ্ঠানটি শেষ করেন।

এ সংলাপে সিবিও প্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ, উন্নয়নকর্মী, এনজিও প্রতিনিধি, ব্যক্তিখাতের উদ্যোক্তা, সমাজকর্মী, পেশাজীবি এবং গণমাধ্যমকর্মী সহ সিরাজগঞ্জ জেলার নাগরিক সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

2020-12-30T12:59:36+06:00December 28th, 2020|Event, Sub-National|

This Is A Custom Widget

This Sliding Bar can be switched on or off in theme options, and can take any widget you throw at it or even fill it with your custom HTML Code. Its perfect for grabbing the attention of your viewers. Choose between 1, 2, 3 or 4 columns, set the background color, widget divider color, activate transparency, a top border or fully disable it on desktop and mobile.

This Is A Custom Widget

This Sliding Bar can be switched on or off in theme options, and can take any widget you throw at it or even fill it with your custom HTML Code. Its perfect for grabbing the attention of your viewers. Choose between 1, 2, 3 or 4 columns, set the background color, widget divider color, activate transparency, a top border or fully disable it on desktop and mobile.