ত্রাণ কর্মসূচি ও কৃষি প্রণোদনার যথাযথ বাস্তবায়নে প্রয়োজন ডাটাবেজ তৈরি, সচেতনতা বৃদ্ধি ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশগ্রহণ

চলমান কোভিড-১৯ অতিমারি এবং সাম্প্রতিক বিধ্বংসী বন্যায় নেত্রকোণার মত হাওড় অঞ্চলে উদ্ভুত পরিস্থিতির কারণে যে ধরনের ত্রাণ ও কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে, তা যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় পর্যায়ে সরকারি পরিষেবার কার্যকারিতা বাড়ানো দরকার। আর সেজন্য ডাটাবেজ তৈরি সহ ত্রাণ বিতরণ সম্পর্কিত অবাধ তথ্য প্রবাহ ও তথ্যের প্রচারের মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। ১৩ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখ রবিবার সকালে আয়োজিত “করোনা ও বন্যা মোকাবেলায় ত্রাণ কর্মসূচি এবং কৃষি প্রণোদনা: সরকারি পরিষেবার কার্যকারিতা” শীর্ষক একটি ভার্চুয়াল সংলাপে এই বক্তব্য উঠে আসে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) ও অক্সফাম ইন বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের আর্থিক সহায়তায় “গণতান্ত্রিক সুশাসনে জনসম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ” শীর্ষক চলমান প্রকল্পের আওতায় এ সংলাপটি আয়োজিত হয়। এ সংলাপটির সহযোগী আয়োজক ছিল বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ, নেত্রকোণা এবং এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ।

চলমান কোভিড অতিমারির অভিঘাত বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রায় সুদূরপ্রসারী চিহ্ন রেখে যাবে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এই দুর্যোগ পূর্ব-বিদ্যমান দুর্বলতাগুলোকে আরও সংকটময় এবং এসডিজির বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কোভিড অতিমারির প্রেক্ষাপটে সাম্প্রতিক বিধ্বংসী বন্যা নেত্রকোণার মতো কৃষি নির্ভরশীল (খানাসমূহের আয়ের প্রায় ৬৮% আসে কৃষি খাতে আত্ম-কর্মসংস্থান এবং দিন মজুরীর মাধ্যমে) জেলাগুলির পরিস্থিতি আরও সংকটময় করেছে। ইউএনওএসএটি এর স্যাটেলাইট ইমেজ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায় ১২ থেকে ২৭ জুলাই সময়ের মধ্যে নেত্রকোণার মোট ভূমির প্রায় ৪৬% এবং প্রায় ৫৯% গ্রাম বন্যা কবলিত হয়েছে।

সিপিডি’র সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট, জনাব মোস্তফা আমির সাব্বিহ তার উপস্থাপিত মূল প্রতিবেদনে এই তথ্যগুলো তুলে ধরেন। তিনি নেত্রকোণা জেলায় করোনা ও বন্যা মোকাবেলায় গৃহীত সরকারি ত্রাণ এবং কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচির কার্যকারিতার একটি প্রাথমিক মূল্যায়নও উপস্থাপন করেন।

করোনা ও বন্যা মোকাবেলায় ত্রাণ এবং কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সামগ্রিকভাবে বিভিন্ন সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ পরিলক্ষিত হয়েছে। এই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, চাহিদা এবং উপজেলা/ইউনিয়ন ভিত্তিক বরাদ্দের বিভাজনের মধ্যে আরও সমন্বয়ের জায়গা আছে। ত্রাণ সেবা সম্পর্কিত ‘হটলাইন’ নাম্বারসহ (যেমন: ৩৩৩) বিভিন্ন অভিনব যেসব উদ্যোগ (যেমনঃ ত্রাণ সম্পর্কিত বিভিন্ন রং-এর কার্ড চালু, প্রচারণার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার) গৃহীত হয়েছে সে সম্পর্কে স্থানীয় পর্যায়ের সুবিধাভোগীরা এখনও সচেতন নন। সুবিধাভোগী নির্বাচন অনেক ক্ষেত্রেই অংশগ্রহণমূলক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়নি। এছাড়া ইউনিয়ন পর্যায়ে ত্রাণ সম্পর্কিত অভিযোগ গ্রহণ এবং নিষ্পত্তির কোন প্রযুক্তি নির্ভর এবং কার্যকর ব্যবস্থা নেই। বন্যার মত প্রাকৃতিক দুর্যোগে কৃষি সহায়তা বিতরণ অনেক ক্ষেত্রেই অধিকতর বেশী ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের চিহ্নিতকরণ এবং তাদের চাহিদা নিরূপণের মাধ্যমে হয় নি।

এ মূল্যায়নের উপর ভিত্তি করে সিপিডি সুপারিশ করে যে, সঠিক চাহিদা নিরূপন এবং সে অনুযায়ী বরাদ্দ নির্ধারণের জন্য স্থানীয় পর্যায়ের দারিদ্র্যের হার, জনঘনত্বের হার, বেকারত্বের হার ইত্যাদি বিবেচনায় নিতে হবে। এজন্য প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে রিয়াল টাইম ম্যাপিং করা যেতে পারে ও বিকাশমান পরিস্থিতির আলোকে ত্রাণ ও সেবা প্রদান কার্যক্রম হাতে নেয়া যেতে পারে। ত্রাণ সেবা সংক্রান্ত প্রযুক্তিনির্ভর উদ্যোগ (যেমন: হটলাইন/নির্ধারিত মোবাইল নাম্বার) সম্পর্কে জনসাধারণের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। ইউনিয়ন/উপজেলাভিত্তিক বন্যার ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বীজের চাহিদা এবং বরাদ্দের তথ্যসহ জেলা পর্যায়ে চলমান ‘কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচির’ আওতাধীন বিভিন্ন সহায়তার একটি কেন্দ্রীয় ডাটাবেজ তৈরি করা, অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত কৃষকদের তালিকা টাঙ্গিয়ে দেওয়া, অধিক হারে স্থানীয় কৃষকদের সম্পৃক্ত করা, স্থানীয়ভাবে বাড়তি চাহিদা মেটানোর ব্যবস্থা করে সরকারি কৃষি প্রণোদনাসমূহ যেন দুর্যোগে অধিকতর ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে পৌঁছায় তা নিশ্চিত করা, উত্থাপিত অভিযোগসমূহের তালিকা প্রণয়ন করে কী পদক্ষেপ এগুলোর প্রেক্ষিতে নেয়া হয়েছে তা স্বচ্ছতার ভিত্তিতে প্রকাশ ইত্যাদি সুপারিশও উঠে এসেছে।

জনাব শোয়েব ইফতেখার, প্রধান, ইকোনমিক ইনক্লুশন অ্যান্ড জাস্টিস, অক্সফাম ইন বাংলাদেশ অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্যে এই প্রকল্প ও সংলাপের উদ্দেশ্য তুলে ধরেন।

জনাব আরিফুজ্জামান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, মোহনগঞ্জ উপজেলা, নেত্রকোণা জেলা বিশেষ বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন। গবেষণা উদ্যোগটির প্রতি সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, “সরকারের সময়োপযোগী এবং পরিকল্পনামাফিক উদ্যোগের কারণে অতিমারি বিপর্যয়ের প্রাথমিক ধাক্কাটা আমরা সামলাতে পেরেছি।” সেই প্রেক্ষিতে তিনি ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জগুলিকে আরও ভালোভাবে মোকাবেলার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

মোঃ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এই সংলাপে তাঁর বক্তব্যে করোনা মোকাবেলায় কী কী উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য জেলা প্রশাসন কাজ করেছে এবং করে যাচ্ছে সেগুলো তুলে ধরেন।

মদন ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য রোজিনা বলেন, সঠিক সময়ে যাতে প্রণোদনা দেওয়া হয় সেদিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। গাগলাজুর ইউনিয়নের সিবিও (community-based organisation) নেতা মনিরুজ্জামান দিলু প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তির উপরে গুরুত্বারোপ করেন। এছাড়া এনজিওকর্মীদের বক্তব্যে কৃষি প্রণোদনায় মনিটরিং-এর প্রয়োজনীয়তার তাগিদ দেওয়া হয়।

কাজি মোঃ আবদুর রহমান, জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, নেত্রকোণা জেলা সংলাপে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সংলাপের আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে পরিষেবায় সম্মিলিত উদ্যোগ ও সম্পৃক্ততার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, জেলা প্রশাসন প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য আরও উদ্যোগী হচ্ছে, এবং নানান পদক্ষেপ নিচ্ছে। এর মধ্যে তিনি “সরকারের সাথে কৃষকের কথা” উদ্যোগটির কথা উল্লেখ করেন। বিশেষভাবে আর্থিক প্রণোদনার কথা এবং পলিসি-নির্ভর পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে।

বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ-এর নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর তাঁর বক্তব্যে জনসচেতনতা ও জনসম্পৃক্ততা, নারীদের অংশগ্রহণ ও বৈষম্য দূরীকরণ, ডাটাবেজের অভাব ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সব অতিমারির সবচেয়ে বড় অভিঘাত নেমে আসে নারীদের উপরে। তিনিও সেবার চাহিদা এবং যোগানের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব দূর করার জন্য একটি ডাটাবেজের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন।

অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, সম্মাননীয় ফেলো, সিপিডি সংলাপে সভাপতিত্ব করেন। তিনি আরও একবার রিয়েল টাইম ডাটাবেজ, সচেতনতা বৃদ্ধি, সুবিধাভোগী নির্বাচনে তদারকি জোরদারকরণ ইত্যাদির গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে অনুষ্ঠানটি শেষ করেন।

এই সংলাপে কমিউনিটি-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ, উন্নয়নকর্মী, এনজিও প্রতিনিধি, ব্যক্তিখাতের উদ্যোক্তা, সমাজকর্মী, পেশাজীবি এবং গণমাধ্যমকর্মী সহ নেত্রকোণার নাগরিক সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

2021-07-19T19:25:16+06:00December 14th, 2020|Event, Sub-National|

This Is A Custom Widget

This Sliding Bar can be switched on or off in theme options, and can take any widget you throw at it or even fill it with your custom HTML Code. Its perfect for grabbing the attention of your viewers. Choose between 1, 2, 3 or 4 columns, set the background color, widget divider color, activate transparency, a top border or fully disable it on desktop and mobile.

This Is A Custom Widget

This Sliding Bar can be switched on or off in theme options, and can take any widget you throw at it or even fill it with your custom HTML Code. Its perfect for grabbing the attention of your viewers. Choose between 1, 2, 3 or 4 columns, set the background color, widget divider color, activate transparency, a top border or fully disable it on desktop and mobile.